বৈশদের প্রত্যাদেশ প্রাপ্তির বিবিধ ফলাফল


ধানখেতের মাঝখান দিয়ে যে উঁচু মাটির রাস্তাটা গ্রামের শেষ মাথা উত্তরপাড়ারর দিকে গিয়েছে, তার উপর আজ চারদিন ধরে বন্যার পানির একটা স্তরের মিহি ঢেউ খেলছে। ধোরা সাপের মত নির্বিষ ঘুংগুর নদীর কূল ছাপায়া এমন বন্যা আবিদুজ্জামানের সাত বছরের জীবনকালে হয় নাই। তার স্মৃতিতে গত সপ্তায়ও পায়ে হেঁটে নদীর ওপারে যাবার কথা উজ্জ্বল হয়ে আছে। সে মাটির রাস্তার পাতলা পানির স্তরে পা ডুবিয়ে দাঁড়িয়ে, পানির দেড় হাত নিচে তলিয়ে যাওয়া ধান খেতে বড়শি ফেলে মাছ ধরার চেষ্টায় আছে। রাস্তার দুই ধারে ধান খেত। আবিদুজ্জামানের উলটো পাশের ধানের খেতে মাছ ধরে তার সম্পর্কে চাচা,আশেক। তারা প্রায় সমবয়সী।

"কিছু ধরসত নি?",উলটো পাশ হতে জিজ্ঞেস করে আশেক। "আমি দ খালি তিনডা খৈয়া ফাইসি।" "নাহ।",উত্তর দেয় আবিদুজ্জামান। মাছ ধরার চাইতে অধিক মনোযোগ দিয়ে সে প্রায় সচ্ছ বন্যার পানির নিচে রাস্তার গায়ে ভেসে উঠা পাতলা মাটির কোনো জিনিসে ভাঙা অংশ খুটে তুলতে চায়। একটু ঘাড় ঘুরিয়ে রাস্তার দিকে তাকালেই দেখা যায় অজস্র অমন ভাঙা টুকরো লেগে আছে তার বুকে। এইভাবে সময় যায়। তবু আবিদুজ্জামানের বড়শিতে কিছু উঠেনা। সে দূরের রেললাইনের রাস্তা পর্যন্ত বিস্তৃত বন্যার পানির দিকে তাকিয়ে থাকে। তার দৃষ্টির সামনে দিয়ে চলে যায় ভাঙা কাঁঠাল গাছের ডাল,সুপারী গাছের ডাল,অনেক খড়কুটো। উত্তরদিক হতে রাস্তা ধরে বেনজির আহমেদকে আসতে দেখা যায়। আবিদুজ্জামান দেখে তার চাচার হাতে বাজারের ব্যাগ। তার কাছে এসে বেনজির আহমেদ বলে,"আয়,বাজারো যায়াম।" "কাকা,রেললাইন দিয়া যায়াম।",আবিদুজ্জামান বলে,মাছ ধরার ব্যর্থ প্রচেষ্টা বাদ দিয়ে সে বড়শির সুতোটা বড়শির গায়ে পেচাতে পেচাতে। অতঃপর বড়শিটা আশেকের দিকে বাড়িয়ে বলে,"বরিরসিবডা বাইত দিয়াইস।" আশেক বড়শিটা নিয়ে মাথা নাড়ে। তাকে পেছেনে ফেলে বেনজির আহমেদ তার ভাতিজাকে নিয়ে বাজারে যাবার জন্য পা বাড়ায়। যেতে যেতে তারা যখন উত্তর পাড়ার পৌরাণিক তেতুল গাছটার নিচে আসে,আবিদুজ্জামান তার চাচার গায়ের নিকটবর্তী হয়ে তার চাচাকে জিজ্ঞেস করে,"কাকা,তেতুই গাসো বলে জীন থাহে?" তার চাচা হাসে আর বলে,"থাকত ফারে। আমি যহন ছোড আসিলাম তহন দেখছি এই গাসো কোব দিলে গাসের কিচ্চু অয় না। দাও বেয়া হইয়া যায়।" আবিদুজ্জামানরে আতংকিত মনে হয়। সে জিজ্ঞেস করে,"হেসা?" "হ,হেসা।" আবিদুজ্জামান তখন চুপ হয়ে থাকে। আর বাজারে গিয়ে কয়টা বরফি খাওয়া যায় ভাবে। তিন টাকা দামের কসকো সাবানের মত দেখতে খয়েরী রংয়ের বরফির স্বাদ বহুদিন পর যখন তার সামনে মরণ ছাড়া অন্যপথ খোলা থাকবেনা,তখন পৃথিবীর শেষ চিহ্ন হিসেবে শেষবার মনে পড়বে। সন্ধ্যার পরপরই বিদ্যুত গেল চলে। ঘরে জলছে একটা হারিকেন। তা দরোজা মুখোমুখা দাঁড়ানো মিরসিবের উপর রাখা। উঠানের উপর পাটি বিছিয়ে তাতে শুয়ে মগ্নভাবে আকাশে তাকিয়ে থাকবার পর আবিদুজ্জামান তার দাদিকে জিজ্ঞেস করে,"দাদু।" "হুঁ।",পাশে বসে থাকা তার দাদি বলে। "আইচ্ছা,আমি দ চান্দে কোন বুরি দেহিনা।আমনে দেহেন কেমনে?" তার দাদি হাসে আর বলে,"আঁরে বাজি,বালা কইরা সাও। অই দ বুরি সরকা লইয়া বইয়া রইসে।" "কই? নাই দ।",আবিদুজ্জামান আরো মনোযোগ দিয়ে তাকায়। "তাইলে বাজি আরো বরো অও। তহন বুজবা।",বলে তার দাদি হাসে। আবিদুজ্জামান বড় হওয়ার সাথে চান্দের বুড়ি দেখার সম্পর্ক ঠাহর করতে পারেনা। "বুরির কিস্সা আবার হুনবানি?"তার দাদি জিজ্ঞেস করে। "আর কত হুনতাম এইডা।" "তইলে একটা শুল্লুক ভাঙো সাই।" "কন।" "আল্লার কি কুদরত,লাডির বিতরে শরবত। কওসাইন কিতা এইডা?" "এইডা দ কইসিলেন আগে একবার। এইডা হইল কুইঅর।"ব "হইসে দ। মনো আসে দেহি।" "দাদু,দহিনফারার কুইঅর খেত দ শ্যাষ। ফানিত ডুইব্বা গেসে।" "বন্যা হইলে ত ডুব্বোয়ে।" "দাদু,এরুম বন্যা আর হইসে নি?" "এগুল দ বন্যা এমনে হয়না। আমি দ দুই বার দেখসি।" "কোন সমো?" "সংগ্রামের সময় আর তোর জন্মের সময়।" "দাদু, সংগ্রামের সময় আমনে কই আসিলেন?" "মিলিটারি আওনের আগে ত এয়ানোয়ে আসিলাম। হেতারা আওনের ফরে তোর তাজিয়া ফুফু আর তোর বাফ রে লইয়া বারির সব বেডিআইত গেসলাম বডারের অই ফার। তোমার দাদায়,দুদু মিয়ায় আর বড় মিয়ায় আসলো বাইত।" সংগ্রামের কথা সে আগেও শুনেছে অনেকবার। পড়েছে স্কুলের বইয়ে। কিন্তু সংগ্রামের যে বিহ্বলতা, তা তাকে স্পর্শ করবে বহুদিন পর যখন সে বুঝবে মানুষ আসলে বড় হয় তার অর্থহীনতা অনুভব করার জন্য।আবিদুজ্জামান তার দাদীকে জিজ্ঞেস করে যে কী হয়েছিল সেইসব দিনে? কী দেখেছিলেন তারা? জমাট অন্ধকারে চাঁদের বিষণ্ন আলোর আস্তর কম্পিত হয় তার দাদীর মৃদু উত্তরে। তিনি উত্তর দিলেন,"কষ্ট আর মরণ।" তিনি আরো বলতে থাকলেন কীভাবে এক নিদারুণ কষ্টে পতিত হয়েছিল এই নির্জন গ্রাম,যেভাবে তিনি শুনেছেন। মৃদু কথার কম্পনে ওই দূর সময় হতে শোনা যায় তিনটা বৈশের* ডাক। তাদের বিশাল দেহ দুলিয়ে আরা ছোটে আর ছোটে। কোন প্রত্যাদেশ পেয়ে যে তারা কোন অচেনা গ্রাম থেকে ছুটে বেরিয়ে যায়,তাদের মালিকও তা জানেনা। তিনি ও তার ছয় ভাই মিলে সেই বৈশদের পেছনে ছোটেন। কতখানি পথ পেরিয়ে বৈশগুলো তাদের কোথায় নিয়ে এসেছে তা তারা বুঝতে পারেনা। এক যৌবন প্রাপ্ত তেঁতুল গাছের নিচে যখন তাদের বৈশগুলো এসে নিথির হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে,এমনকি একবারও ডাকেনা,তখন মালিকে আত্মমহত্যা প্রবণ মেঝভাইটি বলে যে এখানেই মরবে সে। আর সকল ভাইদের মাথায় তখন কী চলছিল মূলত কেউ জানেনি কখনো। সন্ধ্যার নামার পর সেই নতুন গ্রামের লোকজন,যারা কুমারের কাজ করেন,যখন তাদেরকে রাতের জন্য আশ্রয় দিয়ে, খাবার দিয়ে জানতে যে কোথা থেকে আসা হলো। সংকোচের সাথে খাবার মুখে দিয়ে মালিক লোকটা বলে,"বৈশ আমডারে আনছে।" কুমারেরা বুঝতে পারেনা অত দূর হতে বৈশ কেনইবা এই ছয়ভাইকে তাদের নিস্তরঙ্গ জীবনে এনে ফেলবে। লোকটা আরো জানায়,সআলের মদ্যে যাইজ্ঞামু।" কুমারেরা যেন হাফ ছেড়ে বাঁচে। পরদিন যখন দেখা যায় যে সকাল পেরিয়ে বিকাল তারপর রাত হয়ে গেছে আর ছয় ভাই মিলে একটি বৈশকেও নড়াতে পারেনি, তখন কূমারদের কাছে ব্যাপারটা অলৌকিক ঠেকে। যেহেতু এমন কিছু তারা আগে দেখেননি। মালিকের মার খেয়ে আধমরা এক বৈশের ডাক সবচেয়ে বৃদ্ধ কুমারটির কানে গিয়ে পৌঁছানোর পর তার মনে হতে থাকে যে তার অন্ধত্ব ঘুচে গেছে। তিনি তার কর্কশ কন্ঠে বাকি কুমারদের জানান যে এই ভাইদের ভাগ্যে বৈশগুলোই কোন এক প্রত্যাদেশ প্রাপ্ত হয়ে তাদের নতুন ঠিকানা খুজে দিয়েছে। তার ছেলে পড়ালেখা শিখছে। জমিচাষে তার আগ্রহ নেই। এদেরকে নিজের জমি বর্গা দিয়ে থাকার জায়গা করে দেবেন। সবচেয়ে প্রাজ্ঞ হিশেবে সম্মান করে তার কথার প্রতিবাদ করেনি কেউ একজন বাদে। সুপুরুষ এই কুমারটি বিশ্বাস করে যে মুসলমান ছাড়া কেউই তার ছেলেকে মারেনি। যেহেতু সে উপস্থিত ছিল ঢাকায় কোন একপ্রান্তে বৃটিশদের সৈন্য হয়ে। তার খুনীরা আন্টাঘর ময়দানের আম গাছ গুলোতে ঝুলেছিল এক সপ্তাহ আর তিন দিন। তাদের কেউ কেউ ছিল মুসলমান। তাই সুপুরুষ কুমারটি বলে বাকিদের বলে যে যা ইচ্ছা করতে। আর শেষে গাঢ় কন্ঠে ধীরে ধীরে বলে,"হেতারার লাইজ্ঞা তোমডা ফোরামাডির আদলা হইবা।" তার এই ভবিষ্যতবাণীর মর্মার্থ বোঝবার সাধ্য কুমারদের ছিলনা। তাই তারা তাকে বিশেষ পাত্তা দেয় না। এভাবে ছয় ভাই মিলে তাদের স্ত্রী, প্রত্যাদেশপ্রাপ্ত বৈশ,আর কিছু শেষ সম্বল নিয়ে কুমারদের মাঝে থাকতে শুরু করে। ঘুংগুর নামে এক নদীর কাছে তাদের এক নতুন জীবন শুরু হয় । কিন্তু ঈশ্বরের এই মহানুভবতারর রহস্য অনুধাবন করতে করতে পারেনা। আর তাদের মেজ ভাইটি শেষবার যেদিন আত্মমহত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় সেদিন কুমারেরা তাদের বাড়িতে খোলা পিঠা খেতে আসে। ভাইদের স্ত্রীদের তৈরি খোলা পিঠার স্বাদের মাহাত্ম্য অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়ে কুমারেরা বুঝতে পারেনা যে কী দিয়ে এই স্বাদের বিনিময় করা যায়। কুমারেরা তাদের মাঝে পরামর্শ করতে থাকে যে কী করা যায়। তারই মাঝে তেঁতুল গাছটার মালিক যে কুমার সে কিছু জমি খোলা পিঠার বিনিময়ে ভাইদের দেয়। কুমারেরা অবাক হতে গিয়ে ভাবে যে জমি খোলাপিঠার বিপরীতে কম পড়ে যায় কি না। এইভাবে কুমারেরা ভাইদের জমি দেয়। আর এমন খোলাপিঠার জন্য ভাইদের কাছে চিরকাল কৃতজ্ঞ হয়ে থাকে। আর এই জমির উপর ভর করে ভাইয়েরা এই গ্রামে আবাদ করে। আর আত্মহত্যা প্রবণ মেজভাইটি পাট তুলতে তুলতে আত্মহত্যার কথা মনে রাখতে পারেনা। আর আত্মহত্যার প্রতি প্রগাঢ় অনুরাগ নিয়ে আত্মহত্যা করেছিল তার পরবর্তী তিন পুরুষ। তার পরবর্তী চতুর্থতম পুরুষ যার নাম ছিল মৈশান আলি,তার আত্মহত্যার প্রতি কোন অনুরাগ ছিলোনা। যদিও তার ভেতরে নিজের পুর্বপুরুষের সেই অনুরাগ অনুভব করতে পারতেন। মিলিটারি আগমনের ঠিক সাত দিন পূর্বে তিনি তার একটি গরু পিটিয়ে মেরে ফেলেন। কিন্তু কেন মারেন তিনিও বুঝতে পারেন না। একটি দুগ্ধবতী গাভী নদীর ধারে মরে পড়ে থাকে। শেয়াল কুকুরে খায়। তাই হয়তো কুমারেরা তাদের স্ত্রী কন্যাদের তারকাটার ওপারে পাঠিয়ে দিতে থাকে। এবং মৈশান আলির স্কুলশিক্ষক পুত্র দুদু মিয়া বলে যে কুমারদের মত বাড়ির মহিলাদের অইপাড়ে পাঠিয়ে দেওয়াই উত্তম। মৈশান আলী বলেন,"ডেডাইয়াগো লগে আমডার হাযা নি?" কুমারদের মহানুভবতার উজ্জ্বল স্মৃতি তখনো মুছে যায় নি।তাই হয়তো কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার সম্মতি জানিয়ে বলেন যে নারীদের যেন ওপারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এভাবে নারীরা ওপারের অজানায় চলে যায়। মিলিটারিরা যেদিন আসে সেদিন ভোরে তার বড় ছেলে বড় মিয়া প্রাতকর্ম সারতে যায় একটা অজানা আতংক বুকে নিয়ে। আর এইভাবে তার পিতার ঘরের জানালা দিয়ে প্রতিফলিত হয়ে আসা ভোরের আলোয় দেখা যায় গলায় দড়ি দিয়ে লটকে আছে মৈশান আলি। আত্মহত্যার প্রতি কোন অনুরাগ না রেখেই কোন কারণে তিনি আত্মহত্যা করলেন কেউ জানতে পারলোনা। এভাবে বহুদিন পর যখন পানি ঘুংগুর নদী অতিক্রম করে বন্যায় গ্রামকে ভাসায়,তখন পশ্চিম দিক হতে আসে খাকি রংয়ের মিলিটারী। মূলত মুসলমান বাড়িতে মুর্দা দেখায়,অধিকন্তু রঞ্জু রাজাকারের হস্তক্ষেপে মৈশান আলীর পুত্র ও তার কতিপয় ভাতিজারা বেঁচে যায়। তার মেজপুত্র কাফনের কাপড় ও নিজের জীবন নিয়ে যখন বাড়ির কাছে চলে আসে, তখন মিলিটারিদের কাঙ্ক্ষিত উপস্থিতি টের পেয়ে বড় পুকুরপাড়ের কবরস্তানের গাছের আড়ালে গিয়ে লুকায়। সেখান হতে দেখা যায় দক্ষিণপাড়া হতে তার বাড়ি উত্তরপাড়ার দিকে ধানখেত চিড়ে যে রাস্তাটা গেছে তার উপর বন্যার একস্তর পানিতে হালকা একটা স্রোত। আর তার পরিচিত কুমারদের অনেককেই সেই রাস্তা ধরে ছুটতে দেখা গেল। যারা ছিল তার বন্ধু কিংবা বড় ভাইয়ের মতো। আর সে মিলিটারি দের দেখলো তাদে পিছে ছুটতে। অতঃপর শত অস্ত্রে গুলি চললো আকাশ বিদীর্ণকারী শব্দ করে। আর তার চোখের সামনে তার পরিচিত অল্পবয়সী, মধ্যবয়সী, বৃদ্ধবয়সী কুমারেরা গুলির আঘাতে পোড়ামাটির টুকরা হয়ে,মাটির জিনিসের খয়েরী খন্ড হয় চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে লাগলো সেই রাস্তার উপর বন্যার পানির হালকা স্তর ভেদ করে। আর এই রাস্তায় তারা থাকবে যতদিন এই পথ কারো পায়ে না থামবে। সেই সুপুরুষ কুমারের ভবিষৎবাণী সত্য হয়ে মিশে গেল ধরণীর বুকে। অতঃপর যখন কম্পন থামে তখন আবিদুজ্জামানের বলার কিছু থাকেনা। সে কাল সকালে ভেলায় চড়ার কথা ভেবে পাশ ফিরে ঘুমোতে যায়। তার দাদী তাকে ঘরে যেয়ে ঘুমোতে বলে। চাঁদের বুড়িকে ও তার বাড়ি চাঁদকে একা রেখে তারা ঘরে চলে যায়। পরদিন সকালে আবিদুজ্জামান আর আশেক দুজনে বহু কাঠখড় পুড়িয়ে কোনমতে একটি ভেলা বানায়। তাদের সাহায্য করে আশেকের ছোটবোন সালেকা। তারপর যখন তারা রাস্তার ধার দিয়ে ভেলা নামিয়ে ভেলায় উঠে বসে,তখন সালেকা বলে," আমারে নিবি না তোরা?"
আবিদুজ্জামান জিজ্ঞেস করে, "তোরে নিমু কেন?"
"আমিও দ তোরার লগে ভেলা বানাইসি। আমারর নওন লাগবো। আমারে খালি একটু মাইদখানে লইয়া যা। ভেট* তুইল্যাম। তোরাও খাইস।" আশেক আশেক ভেলা বাওয়া শুরু করে দেয়। আর বলে,"যা যা। কাউলকা যাইস।" আবিদুজ্জামান হাসে। সালেকা আর ভেলার মাঝে দূরত্ব বাড়তে থাকে। সালেকা চিৎকার করে বলে,"আমি আম্মারে কয়াম তোরা আমারে নিসত না !" আশেক হিহি করে হাসে। আর আবিদুজ্জামান নিকটবর্তী হতে থাকা রেলরাস্তার দিকে তাকিয়ে ভাবে আজ বিকালে সে কয়টা বরফি খাবে। [*বৈশ=মহিষ *ভেট=শুদ্ধ বাংলা নাম জানা নাই। কালো রংয়ের গোলাকার একট জিনিস। কাঁচা খাওয়া যায়। শাপলা গাছের আশেপাশে পাওয়া যায় দেখেছি]

Rakib Rashid

Comments

Popular posts from this blog

দ্বিধা !

প্রিতম প্রেয়সী

পটলকুমার গানওয়ালা