দ্বিধা !
সাব্বির আজ প্রথম তার বন্ধুদের সাথে খাবার হোটেলে এসেছে । বন্ধুদের সাথে বললে ভুল হবে, সে তার ক্লাসমেটদের সাথে এসেছে। কেউ বিশ্বাসই করতে চাইবে না যদি বলি, সে তার এই দীর্ঘ ১৬ বছরের জীবনে কোন দিন কোন মুদিদোকান থেকে চিপস্ কিনে খায়নি, কোনদিন কোন রেঁস্তরায় খায় নি । তবুও কথাটা সূর্যের মতো সত্য । আজই সে প্রথমবারের মতো অনুমতি পেল, সাব্বির জানে না এটাই শেষবার কী না ! আগামীকাল তার স্কুলের শেষ দিন, শেষ হয়ে যাবে তার জীবনের একটি অধ্যায়, এই ভেবে সাব্বিরের মা সাব্বিরের বাবাকে অনেক বলে রাজি করিয়েছেন । যদিও তার বাবা কোন প্রয়োজন মনে করে নি, তার পরেও সে নিজের মতের বিরুদ্ধে এই প্রথম রাজি হয়েছে । হোটেলের ভিতরে সবাই আড্ডায় মেতে রয়েছে । ১০/১২ বছরের একটা ছেলে এসে একে একে সবাইকে খাবার দিতে লাগল । সামনে খাবার পাওয়ার পর সবাই যেন কেমন চুপ চাপ হয়ে গেল, যদিও ৩/৪ জন কথা বলছিল । সাব্বির কিছুতেই এই পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে পারছিলো না । যখন সে খাবার মুখে নিতে যাবে তখন তার অস্বস্তি হচ্ছিল, তার মনে হতে লাগল তার ক্লাসমেট, হোটেলের ছোট ছেলে, হোটেলের মালিক , টিউব লাইটের সাথে বার বার বারি খাওয়া পোকাটা , টেবিলের উপরে রাখা পানির জগ সবকিছুই যেন তার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেন সে একজন খুনি । সাব্বির খাবার মুখে নিতে পারল না । সে মাথা নিচে দিয়ে চুপচাপ বসে আছে । একটুপর হোটেলের ছোট ছেলেটা সকলের সামনে একটা করে কোকাকোলা দিল । এবার সে ভয় পেল । যদিও সে এইরকম কালো তরলে ভরা বোতল এর আগে অনেক মুদি দোকানে দাড়িয়ে থাকতে দেখেছে । সাব্বির বিভিন্ন মুভিতে দেখেছে ভিলেনেরা সাধারণত কালো পানীয় পান করে । ভিলেনদের চরিত্র খারাপ হয়, সে ভাবল যদি সে এই কালো পানীয় পান করে তাহলে সেও খারাপ হয়ে যাবে । সাব্বির বোতলটার দিকে ২বার ভয়ে ভয়ে তাকাল, এর পর আবার নিচের দিকে তাকিয়ে সময় পার করতে লাগল । সাব্বির যে কিছুই খাচ্ছে না তা অনেকেই লক্ষ্য করেছে, কিন্তু কেউ আগ্রহ দেখাল না । বরাবরই ভাল রেজাল্ট করায় অনেকেই তাকে হিংসা করে, আবার একই কারনে অনেকে সাব্বিরকে এড়িয়ে চলে । আর সাব্বির কোন প্রয়োজনেও কারো সাথে কথা বলে না । সাব্বিরকে তার বাসা থেকে বলে দেওয়া হয়েছে কারও সাথে না মিশতে, আর সাব্বিরও কখনও তাদের কথা অমান্য করে নি । খাওয়া শেষে সবাই একে একে হোটেল থেকে বের হল । সাব্বির সবার শেষে বের হলো । হোটেল থেকে বের হওয়ার পর সবাই একটি মুদিদোকানের সামনে দাড়িয়ে আছে । আজ রাকিবের জন্মদিন, তাই আজকে সে সবাইকে ফ্রিতে সিগারেট খাওয়াবে । হঠাৎ রাকিব সাব্বিরের হাতে একটি ব্লাক সিগারট দিয়ে মুচকি হেসে বলল, "ইনজয় ব্রো "। সাব্বিরেরে অনেক দিনের ইচছা ছিল সে একজন ধুমপায়ী হবে । কারন তার প্রিয় চরিত্র "ফেলুদা" একজন ধুমপায়ী । ফেলুদার সিগারেট খাওয়ার স্টাইল তাকে মুগ্ধ করে । কিন্তু সাব্বির জানে না কিভাবে সিগারেট খেতে হয় । সে বুঝতে পারছে না কীভাবে শুরু করবে, সে কীভাবে তার হাতের সিগারেটটাকে জলন্ত করবে, আর ধোয়াটা সে কীভাবে গিলবে ! সে কী ধোয়াটা ভাতের মতো গিলবে নাকি পানির মতো করে গিলবে / নিঃশ্বাসের সাথে গিলে ফেলবে ! সাব্বির আর কিছু ভাবতে পারলো না, সিগারেটটি তার হাত থেকে পড়ে গেল । সাব্বিরের আর ধুমপায়ী হয়ে ওঠা হল না । সাব্বিরের সহপাঠীদের আড্ডা চলছে । কিন্তু সাব্বিরের পক্ষে আর থাকা সম্ভব হলো না, কারন এদিকে যে আছরের নামাজের সময় হয়ে গেছে, তার বাসায় যেতে হবে ।
বিঃদ্র্ঃ সাব্বির মধ্যবিত্ত পরিবারে কড়া শাসনের মধ্যে বেড়ে ওঠা চরিত্র ।
বিষয়বস্তু : আনিসুল হক (ফাঁদ)
বিঃদ্র্ঃ সাব্বির মধ্যবিত্ত পরিবারে কড়া শাসনের মধ্যে বেড়ে ওঠা চরিত্র ।
বিষয়বস্তু : আনিসুল হক (ফাঁদ)
Comments
Post a Comment