কিছু পেতে হলে কিছু হারাতে হয়

যে ছেলেটা পড়ার ভয়ে প্রতিদিন
লাস্ট বেঞ্চে বসে থাকতো সে আজ
বুয়েট ইন্জিনিয়ার।
.
ছেলেটার নাম মারুফ! গত মাসে
আমেরিকা থেকে দেশে ফিরেছে।
আমার জানামতে তিনি খুব খারাপ
ছাত্র ছিলেন। কিন্তু কিভাবে এই
অসাধ্য সাধন করলেন এই সমন্ধে আমি
জিজ্ঞেস করলাম,
- ভাই আপনার সফলতার রহস্য কি?
- পরিশ্রম!
- এটাতো আছেই! তাছাড়া কোনো
স্পৃহা বা অনুপ্রেরণা?
- না বললে হয়না?
-
আমি একটু বিচলিত'বোধ করলাম! বুঝতে
পেরে মারুফ ভাই বললো, - দেখো তুমি
আমার অনেক ছোট। বিষয়টা বললে তুমি
কিভাবে নাও.....!!!
.
- না ভাই বলতে পারেন! আমি
পজেটিভ মন মানসিকতার মানুষ।
- তাহলে শুন, কিন্তু কাউকে বলবা না।
আমি উৎসাহ নিয়ে বললাম! - ঠিক আছে
ভাই।
.
- "একসময় ক্লাসের খুব খারাপ ছাত্র
ছিলাম আমি! তখন নবম শ্রেণীতে পড়ি।
আমাদের ক্লাসে মোট শিক্ষার্থী
সংখ্যা ছিলো ৭০জন! তারমধ্যে আমার
রোল ৬৫! তবুও প্রতিদিন স্কুলে যেতাম।
তার একটা কারন আছে! পরে বলছি......
অবশেষে ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হলো!
অর্থাৎ আমি এবার দশম শ্রেনীতে
উর্ত্তীণ হলাম! রোল মাশাল্লাহ
সবচেয়ে বেশী ৭০!
.
হাইস্কুলে খারাপ ছাত্রদের খুব ঘৃণা
করা হয়! সহপাঠী, বন্ধু বান্ধব, শিক্ষক
শিক্ষিকা সবাই আমাকে খুব ঘৃণা
করতো। তাদের মধ্যে একজনকে আমি
প্রচন্ড পছন্দ করতাম, হয়তোবা
ভালোওবাসতাম। নাম সাদিয়া।
এই মেয়েটার জন্যেই আমি প্রতিদিন
স্কুলে যেতাম! শুধু একনজর দেখার জন্য।
ওকে দেখলে আমি কেমনজানি হয়ে
যেতাম! উপস্থিত বুদ্ধি হারিয়ে যেত,
হার্টবিট বেড়ে যেত! একদম
অস্বাভাবিক অবস্থা।
.
বহুবার চেষ্টা করেও সাদিয়াকে
আমার মনের কথা বলতে পারিনি।
একদিন সাহস করে বলে ফেললাম,
- সাদিয়া আমি তোমাকে খুব পছন্দ
করি, ভালোবাসি।
মেয়েটা খুব স্বাভাবিকভাবে বললো -
তাই?
আমি অপরাধীর মত বললাম - হুম।
হঠাৎ করে মেয়েটা আমার গালে
থাপ্পড় মারলো। আমি থমকে গিয়ে
'হা' করে চেয়ে রইলাম।
মেয়েটা বলতে লাগলো,
- সাহস কতো!! তোর মত ছেলে আমাকে
প্রেম প্রস্তাব দেয়! তুইতো ক্লাসের
লাস্ট বয়! ক্ষ্যাত একটা।
জানিস আমার বাবা আমাকে
ইন্জিনিয়ার ছেলের সাথে বিয়ে
দিবে! তোর মত লাস্ট বেঞ্চের
ছাত্রের সাথে না। ফাযিল
কোথাকার.....
আর কখনো আমার সামনে আসবি না।
.
সেদিনযে স্কুল থেকে
বেরিয়েছিলাম আর কখনো যাইনি!!
ময়মনসিংহের ছোট্ট একটি শহর গফরগাঁও!
সেখান থেকে এসএসসি এবং
ইন্টারমিডিয়েট কম্পলিট করলাম।
এসএসসিতে গোল্ডেন! এইচএসসিতে
গোল্ডেন অবশেষে বুয়েটে চান্স!
.
.
এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড়
অনুপ্রেরণা! সেদিন'যে মেয়েটা
আমার গালে থাপ্পড় মেরেছিলো,
সেই থাপ্পড় ই আজ আমাকে এতো উপরে
তুলে দিয়েছে! তার প্রতি আমি
চিরকৃতজ্ঞ।
.
মারুফ ভাইয়ের কথাগুলো শুনে আমার
শরীরের লোম দাড়িয়ে গেল! তারপর
জিজ্ঞেস করলাম,
- আচ্ছা ভাই ওই মেয়েটার সাথে'কি
আপনার এখনো কোনো যোগাযোগ
আছে?
- নাহ্! তবে কিছুদিন আগে দেখা
হয়েছিলো.....
- কিভাবে?
- আমার এক ফ্রেন্ডের দ্বারা।
আমার কলেজ ফ্রেন্ড আসিফ! ওর কাছে
আমি ফেরেস্তার সমতুল্য! ১মাস আগে
আমি যখন আমেরিকা থেকে দেশে
ফিরলাম! তখন আসিফ এসে আমার
বাসায় উপস্থিত!
দীর্ঘ ৮বছর পর ওর সাথে আমার দেখা।
এমন সময় ছেলেটা এসে কেঁদে কেঁদে
বলছে! - মারুফ ভাই টাকার অভাবে
আমার স্ত্রী মারা যাচ্ছে! প্লিজ
আপনি ওকে বাঁচান।
.
- এর মধ্যে বিয়েও করে ফেলেছিস?
যাইহোক কি হইছে তোর বউয়ের?!
- একটা অপারেশন করতে হবে! ২লাখ
টাকা দরকার।
- আচ্ছা চল......
অতঃপর হাসপাতালে গেলাম!
তাড়াহুড়োর কারনে টাকা জমা দিয়ে
চলে এসেছি!
তার ১০দিন পর, আবার আসিফ আসলো
আমার কাছে!
- মারুফ ভাই আপনাকে আমার সাথে
একটু যেতে হবে!
- কোথায়?
- আমার বাসায়।
- কেন?
- আমার স্ত্রী আপনাকে একটু দেখতে
চায়।
- কিন্তু আমারতো আজ বেশ কয়েকটা
প্রোগ্রাম আছে।
- প্লিজ ভাই......
অবশেষে আসিফের অনুরোধে ওর
বাসায় গেলাম! খুবই মধ্যবিত্ত পরিবার
ওর। সাদামাটা পরিবেশ! খোলা
হাওয়া, সবমিলিয়ে ভালোই।
ফ্রেশ হয়ে রুমে আসতেই, ওপাশ থেকে
কেউ একজন সালাম দিলো! মনেহয়
আসিফের বউ!!
.
মেয়েটার দিকে চেয়ে সালামের
জবাব দিবো, এমন সময় থমকে গেলাম!
কারন এই মেয়েটিই আমার স্কুলজীবনের
ফাস্ট ইমপ্রেশন "সাদিয়া"!!!
যাকে একটাবার দেখার জন্য প্রতিদিন
স্কুলে দৌড়ে যেতাম। যার একটা
থাপ্পড়ে আজ আমি ইন্জিনিয়ার। (মনের
মধ্যে মুচকি হাসি)!
.
লক্ষ্য করলাম বালিকার চোখে জল!
আমি স্বাভাবিকভাবেই বললাম, -
কাঁদছো কেন?
এবার সাদিয়ার চোখ বেয়ে অশ্রুর ঢল
নেমেছে! মেয়েটা হাতজোর করে
বলতে লাগলো - প্লিজ মারুফ তুমি
আমাকে মাপ করে দাও।
-
সাদিয়ার কান্না দেখে আমার
চোখেও অশ্রু চলে আসলো।
- খুব ভালোবেসেছিলাম তোমাকে!
তখন যোগ্যতা ছিলো না তাই পাইনি!
আজ যোগ্যতা আছে কিন্তু তুমি নেই।
এটাই বাস্তবতা!
কিছু পেতে হলে কিছু হারাতে হয়।


                          collected by

                                            Fahmid Hasan

Comments

Popular posts from this blog

দ্বিধা !

প্রিতম প্রেয়সী

পটলকুমার গানওয়ালা